আল্লাহ তায়ালা মানুষ জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আবার মানুষকে ধ্বংস করার জন্য শরীরে অনেক রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি করেছেন। আমাদের প্রিয় নবীর ভাষ্য মতে মানুষের শরীরে আল্লাহ তায়ালা ৩০০০ রকমের রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি করেছেন। ১০০০ টি রোগ-ব্যাধির ঔষধ সম্পর্কে ডাক্তাররা অবগত আছেন। বাকী ২০০০ টি রোগের ব্যাপারে তারা অবহিত নন। মানুষের বহুরুপী এই রোগ-ব্যাধির কবল থেকে মুক্তির জন্য কেউ এলোপেথিক, কেও হোমিওপেথিক, কেও কবিরাজী, কেও বৈদ্যিক, অবশেষে কোরানিক ঝাড়-ফুঁকের আমল দ্বারা বাচার বা সুস্থতার পথ খুজে। দুনিয়ার কোন ঔষধে যখন কারো রোগ নিরাময় হয় না তখন মানুষ আল কোরানের আমলের আশ্রয় নেয়। পৃথিবীতে যাদুকরা যখন মানুষকে যাদু করা আরম্ভ করে তখন দুনিয়ার কোন ঔষধ তার কাজে আসে না। এসব শয়তানী যাদু বিদ্যাকে একমাত্র ন্যস্যাদ করতে পারে আল্লাহর বাণী আল কোরান। ফেরাউন যখন হযরত মুছা (আঃ) এর সাথে তর্কে পারতেছেনা তখন সে যাদুকরের আশ্রয় নেন। কিন্তু মিশরীয় সমস্ত যাদুকররা আল্লাহর নবী হযরত মুছা (আঃ) কর্তৃক পঠিত আল্লাহর বাণীর কাছে মিশরের সমস্ত যাদুকররা পরাজিত হলেন। ভারতের পৃত্তিরাজ যখন হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজের সাথে যুক্তি তর্কে হারিয়ে গেলেন তখন তিনিও যাদুকরের আশ্রয় নিলেন। কিন্তু খাজা গরীবে নেওয়াজ আল্লাহর বাণী আল কোরান দিয়ে যাদুকরদেরকে পরাজিত করে দিলেন। মেডিসিন বিজ্ঞানের রাস্তা যেখানে শেষ হবে আল্লাহর কালামের যাত্রা সেখানে শুরু হবে। তাই যুগে যুগে ধার্মিক মুসলমানরা আল কোরানের আমল দ্বারা উত্তমভাবে আরোগ্য লাভ করেছেন। কেননা আল্লাহর বাণী আল কোরান হচ্ছে রোগ নিরাময়কারী ও প্রতিকারক। তাই আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন- "হে রাসুল (দঃ) আপনি বলুন, ঐ কোরান ঈমানদারদের জন্য হেদায়ত বা পথপ্রদর্শক এবং রোগের প্রতিকার।" সূরা হা-মীম সাজদাঃ আয়াত-৪৪, অন্যত্র এরশাদ করেন- "আমি কোরানে এমন কিছু আয়াত নাযিল করেছি যা শেফা বা রোগের প্রতিকার এবং মুমিনদের জন্য রহমত।" সূরা বনী ঈসরাইলঃ আয়াত-৮২, মহান আল্লাহ তায়ালা অন্য এক আয়াতে এরশাদ করেছেন- " হে মানবজাতি! তোমাদের প্রভূর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে উপদেশবাণী এবং তোমাদের অন্তরে লুকায়িত রোগের নিরাময় এসেছে, যা মুমিনদের জন্য পদপ্রদর্শক ও রহমত।" সূরা ইউনুচঃ আয়াত-৫৭, অতএব, বুঝা গেল যে, কোরান শরীফ মানষিক ও শারীরিক সকল রোগের নিরাময় এবং ইহকালীন ও পরকালীন সকল সমস্যার সমাধান দাতা। কিন্তু সকলের পক্ষে আল কোরান থেকে আরোগ্য লাভের উপায় উদ্ভাবন করা সহজ হয় না। অবশ্যই অসুস্থ ব্যক্তি যদি সত্যিকারভাবে পূর্ণ ঈমান ও দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে শর্তাবলী পূরণ করে কোরান দ্বারা উত্তমভাবে স্বীয় রোগের চিকিৎসা করে, তাহলে রোগ কখনো তার মুখামুখি অবস্থান করতে পারে না। কারণ মহান আল্লাহ পাকের এই কালাম যদি পাহাড়ের উপর নাযিল করা হত, তাহলে পাহাড় আল্লাহর ভয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যেত। যদি উপরে অবতীর্ণ করা হত তাহলে জমিন ফাটিয়া চৌচির হয়ে যেত।--(সূরা হাসর), মহান আল্লাহ তায়ালা যাদেরকে কোরানে পাকের জ্ঞান দান করেছেন, তাদের জন্য কোরানের মধ্যে মানষিক ও শারীরিক সবধরণের রোগের নিরাময়, রোগের কারণ এবং রোগমুক্ত থাকার উপায় বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
অন্তরের বা মানষিক রোগ দুপ্রকারঃ ১. সন্দেহ ও সংশয় রোগ, ২. কুপ্রবৃত্তি ও নাফরমানির রোগ। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন- " হে রাসুল (দঃ)! আমি আপনার উপর যে কোরান অবতীর্ণ করেছি যা তাদের নিকট পাঠ করা হয় তা কি তাদের জন্য যথেষ্ট নয় ? নিশ্চয় ঐ কোরানে ঈমানদারদের জন্য রহমত ও উপদেশ রয়েছে।"---সূরা আনকাবুতঃ আয়াত-৫১, "যাদুল মাদ" নামক কিতাবে আল্লামা ইবনে কায়্যিম বলেছেন- "কোরান যাকে রোগমুক্ত করতে পারে না তাকে আল্লাহ পাকও শেফা দেননা। আর যার জন্য কোরান যথেষ্ট হয় না, তার জন্য আল্লাহও যথেষ্ট হয় না। কোরানের আলোকে দৈহিক রোগের নিরাময় পদ্ধতি তিন প্রকারঃ ১. স্বাস্থ্যের রক্ষণাবেক্ষণ করা। ২. ক্ষতিকর ও অনিষ্টকর জিনিস থেকে বাচিয়া থাকা। ৩. সবধরণের ক্ষতিকারক জিনিস সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা লাভ করা। আল কোরানের এই নিতীগুলো যে মানিয়া চলিবে সে সুস্থতা লাভ করবে, ইনশা আল্লাহ।
হাদিস দ্বারাও প্রমানিত যে, ঝাড়-ফূঁকের দ্বারা চিকিৎসা করা অত্যন্ত উপকারী ঔষধ। দুঃখ-কষ্ট দূর করার এবং উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য দোয়া হল সর্বোতকৃষ্ট উপকরণ। তবে শর্ত হল শরীয়ত বিরোধী কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকতে হবে। তিরমীজি ও অন্যান্য হাদিসের কিতাবে আছে, দোয়ার দ্বারা ঐ সমস্ত বিপদ-আপদে সাহায্য পাওয়া যায়, যাতে কেহ আক্রান্ত হয়েছে বা হবে। হাকেম, তিরমিজি ইত্যাদি হাদিসের কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, "তাকদীরকে দোয়া ছাড়া আর কিছুই পরিবর্তন করতে পারে না এবং নেক কাজ হায়াত বৃদ্ধি করে।"
আর ঝাড়-ফুকের ক্ষেতে রোগীকে আল্লাহ এবং আল কোরানের প্রতি দৃঢ় আস্থা রাখতে হবে এবং ঝাড়-ফুঁককারী উক্ত কাজে যোগ্য এবং দক্ষ ও পরহেজগার হতে হবে। বুজুর্গানেদীনের দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী সাধনা করতে হবে।
শারীরিক সুস্থাতা অর্জনের জন্য চারটি শর্ত বা পদ্ধতি প্রচলিত আছে। যেমনঃ ১. দোয়া বা প্রার্থনা। ২. ঔষধ বা চিকিৎসা। ৩. আমল বা অজিফা। ৪. মিতচার ও সংযম।
শারীরিক সুস্থাতা অর্জনের জন্য চারটি শর্ত বা পদ্ধতি প্রচলিত আছে। যেমনঃ ১. দোয়া বা প্রার্থনা। ২. ঔষধ বা চিকিৎসা। ৩. আমল বা অজিফা। ৪. মিতচার ও সংযম।

